শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন

দেড় হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে সিলেট বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স

জাফলং নিউজ ডেস্ক / ১৬৩ শেয়ার
আপডেট : সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ অপরাহ্ন

দেড় হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে সিলেট বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স


সিলেট বুরো:: সিলেটে দেড় হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স।

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সিলেটে গড়ে তোলা হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্স’। দেশে এই প্রথমবারের মতো এ ধরনের কোনোও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত প্রকল্পে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এ প্রকল্পটি।


সিলেটে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণের তথ্য প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয় চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি। ওইদিন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদ্যোগে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

এরপর সদ্যঘোষিত সিসিকের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরিফ। ২৫ তলাবিশিষ্ট এই কমপ্লেক্সের নকশাও ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে। নকশাটি ট্রায়াঙ্গল কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান নকশা করেছে। এর সাথে স্থপতি শাকুর মজিদ জড়িত।

সিসিকের পরিকল্পনা থেকে জানা গেছে, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার হাসান মার্কেট ও লালদিঘী সিটি সুপার মার্কেটের জায়গায় গড়ে তোলা হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্স’। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে হবে এই আধুনিক স্থাপনা। যেখানে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরে’ তাঁর স্মৃতি ছাড়াও ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীকী উপস্থাপনা থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার সেই তর্জনীর আদলে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে’ একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।  এখানে ‘বঙ্গবন্ধু প্লাজা’য় থাকবে মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক স্মারক সংগ্রহশালা, সিনেপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম, এক হাজার আসনের কনভেনশন হল। এবং থাকবে শেখ রাসেলের নামে একটি পার্কও।

নির্মিতব্য এই কমপ্লেক্সে মানুষের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য কমপ্লেক্সে থাকবে নাগরিক চত্বর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রাখা হবে উন্মুক্ত মঞ্চ। কমপ্লেক্সে থাকবে খোলা পার্ক, বইমেলা বা কুঠিরশিল্প মেলা করার জন্য ৩৪২টি স্টল বসানোর সুবিধা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা সহযোগে কমপ্লেক্সটি হয়ে ওঠবে দৃষ্টিনন্দন। এই কমপ্লেক্সের ল্যাম্পপোস্টগুলো হবে সিলেটের ঐতিহ্য দুটি পাতা-একটি কুঁড়ির আদলে।

এদিকে, হাসান মার্কেট ও লালদিঘী সিটি সুপার মার্কেটে বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ছয় তলাবিশিষ্ট একটি আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করা হবে।

জানা গেছে, সিলেটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্স’ গড়ার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। নকশা প্রস্তুত ও প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চলতি বছরের জুনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ বরাবরে আবেদন করেন। এরপর সেখান থেকে মেলে অনুমতি। এই ট্রাস্টের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কমপ্লেক্সের বিষয়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমরা সিলেটে বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি। প্রায় ১৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ২৫তলা বিশিষ্ট এই কমার্শিয়াল হাবের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সিলেট মহানগরীর ব্যবসা বাণিজ্যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়েল ট্রাস্টের সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করায় এই পুণ্যভূমির নাগরিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই কমপ্লেক্সে থাকবে বঙ্গবন্ধু চত্বর, বঙ্গবন্ধু প্লাজা, হেরিটেজ মার্কেট, কমার্শিয়াল হাব, শেখ রাসেল পার্ক, কনভেনশন সেন্টার, অডিটোরিয়াম, ফেয়ার প্লেসসহ নানাবিধ সুবিধা।’

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রকল্পটির জন্য বাজেট অনুমোদনের অপেক্ষা চলছে। অর্থ বিভাগ থেকে বাজেটের অনুমোদন পেলেই শুরু হবে কাজ।

প্রসঙ্গত, হাসান মার্কেট গড়ে তোলা হয় পাকিস্তান আমলে। তখন সিলেটের জেলা প্রশাসকের নামেই এই মার্কেট নির্মাণ করা হয়। পাকিস্তানি নাগরিকের নামে গড়ে তোলা মার্কেটটির নাম পরিবর্তনে বিভিন্ন সময়ে দাবি ওঠেছে। অবশেষে পুরো মার্কেটটিই এখন ভাঙা পড়ছে। হাসান মার্কেট ও লালদিঘী সিটি সুপার মার্কেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন।


আরও পড়ুন