বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন

স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে শিল্টুর ‘ডাস্টবিন’!

কামরান ও শুভ,মৌলভীবাজার  :: / ১৯৬ শেয়ার
আপডেট : সোমবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২২, ২:২৯ পূর্বাহ্ন

ঘরের কিংবা আশেপাশের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য আমরা ডাস্টবিন ব্যবহার করি। ডাস্টবিন দেখেই নাক মুখ শক্ত করে চেপে ধরে সবাই। এই বর্জ্য পেরিয়েই কেউ যান অফিস কেউবা  স্কুল-কলেজে । সবাই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধময় পথটাকে এড়িয়ে চলতে চান। প্রায়ি দেখা যায় সড়কে রাখা ডাস্টবিনে ঢাকনা সরিয়ে মানুষরা ডাস্ট রাখছেন। কেউ ময়লা হাতে লাগার ভয়ে নিচেই রেখে দেন। ডাস্ট ভরে যায়, কখনো দিনের পর দিন পার হয়ে যায় ময়লে পড়েই থাকে তার স্থানেই! তখন দেখা দেয় নানা রখম সমস্যা। 


আর নয় সমস্যা, মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শিল্টু দাস নতুন একটি ডাস্টবিন তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন । তিনি সেটির নাম দিয়েছেন “আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডাস্টবিন”।


ডাস্টবিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে। ময়লা আবর্জনা নিয়ে বিনের কাছে গেলে অটোমেটিক ঢাকনা খুলে যাবে এবং ময়লা ফেলার পর আবার ঢাকনা লেগে যাবে। এটির বিশেষ আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ময়লা ভর্তি হওয়ার পর আর ঢাকনা খুলবে না। এবং যিনি মালিক বা পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রিত মুঠোফোনে মেসেজ ও কল যাবে।


গত কয়েকদিন আগে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আয়োজনে ৪৩ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলায় মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থী শিল্টু দাস’র এই প্রজেক্টটি ১ম স্থান অর্জন করে।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করবে শিল্টুর 'ডাস্টবিন'!

ছবি :মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ নেছার আহমদের হাত থেকে পুরষ্কার নিচ্ছেন শিল্টু দাস ও তার গ্রুপ।


শিল্টু দাস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ৬ষ্ট পর্বের ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার কালাপাশা ইউনিয়নের হারুনী গ্রামে তার বাড়ি। শিল্টু সুপ্রভাত চন্দ্র দাস’র ছেলে।


শিল্টু দাস বলেন, আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে মৌলভীবাজার পৌর শহরের প্রতিনিয়তই আসতাম। পৌরসভার ডাস্টবিনগুলো আমার চোখে বাঁধতো। দেখলাম বেশিরভাগ ডাস্টবিন ময়লা ভর্তি হয়ে উপচে নিচে পরে আছে। লোকজনও বাসার, দোকানের ময়লা নিচে ফেলে দিচ্ছে। যেটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আবার, পথচারিরাও এইটার পাশ গেলে নাক চেপে যেতে হয়। প্রচুর গন্ধ বের হয়। অনেকেই দেখা যায় ময়লা ফেলতে চায় না হাতে ময়লা লাগতে পারে এই ভেবে। যেটার জন্য তারা ডাস্টবিনের ঢাকনা না তুলে ময়লা না ফেলে এইটার পাশেই ময়লা রেখে দেয়। আবার আমরা প্রায়ই দেখি ডাস্টবিনের পাশের ময়লা গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিক সময়ে নিতে আসে না বা তারা বুঝেন না কখন ডাস্টবিন পূর্ণ হয়।


তিনি আরও বলেন, এই সমস্যা গুলোর সমাধান এর জন্যই আমার এই প্রজেক্টটি তৈরি করা। আমার এই প্রজেক্টটি যেভাবে কাজ করবে। ডাস্টবিনের সামনে ময়লা নিয়ে দাড়ালেই সে নিজে নিজেই ঢাকনা খুলে দিবে যার ফলে হাতে ময়লা লাগবে না। কেউই বিনের মধ্যে ময়লা ফেলতে দ্বিধাবোধ করবে না।
আবার যখন ময়লা পূর্ণ হয়ে যাবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাস্টবিনের মালিক বা সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার অফিসে কল যাবে এবং লোকেশন বলে দিবে। তারপর তারা ময়লার গাড়ি দিয়ে কালেক্ট করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিবে।


মৌলভীবাজার পৌরসভার উপ সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে পৌরসভার মেয়র মহোদয়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করবো বিষয়টি নিয়ে। ময়লা কালেকশনের, পরিবেশ সুরক্ষা ও পরিস্কারের ক্ষেত্রে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ডাস্টবিনটি অনেক কাজে দিবে।


মৌলভীবাজার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টের ইনস্ট্রাক্টর দেবাশীষ রায় বলেন, তাদেরকে যতটুকু সহযোগিতা করার আমরা করেছি। আমরা চাই ভবিষ্যতে তারা আরো উন্নতি করুক। আমার বিশ্বাস তারা যদি ঠিকমত এটি নিয়ে কাজ করতে পারে এবং উপস্থাপনা করতে পারে সেক্ষেত্রে দেশ-বিদেশে এটি ছড়িয়ে যাবে। কারন এই প্রজেক্টটি দেশ ও জনগণের কাজে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে।


শিল্টু দাশ জানান, কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি এই প্রজেক্টটি তৈরির জন্য আমি ২০২১ সাল থেকে কাজ করে আসছি। যেদিন এই প্রজেক্টটি বাস্তবে রূপ নিবে সেদিনই আমি সার্থক। প্রজেক্টটি যাতে বাস্তবায়ন হয় এজন্য সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

জাফলং নিউজ/ডেস্ক/কামরান/শুভ 


আরও পড়ুন