মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন

স্পর্শেই লাজে মরে ‘লজ্জাবতী’!

শুভ গোয়ালা, কুলাউড়া / ২০২ শেয়ার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

‘লজ্জাবতী’, আমরা সবাই কমবেশি এই উদ্ভিদটির সঙ্গে পরিচিত। ‘লজ্জাবতী’ দেখেছেন অথচ ছুয়ে তার লজ্জার প্রকাশিত হতে দেখেনি এমন পাওয়া দুস্কর।


লজ্জাবতীর ইংরেজী নাম ‘মিমোশা’। মিমোশা মেয়েদের নাম, কাকতালীয়ভাবে হলেও সত্য । কেউ ভাবতেই পারেন, লজ্জাবতী এ কারণেই মেয়েদের মতো লাজুক স্বভাবের। এটি লজ্জা পায় বলে অনেকে ‘লাজুক পাতা’ বলে থাকেন। সিলেটে একে  ‘ছইতে মরা’ বলে থাকে।  এর পাতা স্পর্শ করলেই নববধূর মতো নুইয়ে পাড়ে। এর জন্যে এই উদ্ভিদটিকে লজ্জাবতী বলা হয়।


লজ্জাবতী হচ্ছে স্পর্শকাতর লতাবিশেষ। এটিকে স্পর্শ করলেই নুয়ে পড়ে। কিন্তু কেন? এ বিষয়টি বিজ্ঞানীদেরও বেশ ভাবিয়েছে।  তারা লজ্জবতী গাছ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জেনেছেন দারুণ কিছু বিষয়। লজ্জাবতীর পাতা কেন সঙ্কুচিত হয় বা নুয়ে পড়ে, এ সম্পর্কে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানান, লজ্জাবতীর পাতার গোড়া কিছুটা ফোলা থাকে। এর ভেতরে বেশ কিছু বড় বড় কোষ আছে। এসব কোষ যখন পানিভর্তি হয়ে ফুলে ওঠে, ঠিক তখন লজ্জাবতী পাতার ডাঁটাটি সোজা হয়। কিন্তু হঠাৎ পাতা স্পর্শ করার সাথে সাথে ‘অ্যাসিটাইর কোলিন’ জাতীয় একধরনের রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে একটা তড়িৎ প্রবাহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রাসায়নিক পদার্থ খুব দ্রুত এক কোষ থেকে আরেক কোষে যেতে পারে। এর প্রভাবেই পাতার গোড়ার ফোলা কোষগুলো থেকে খনিজ লবণ হঠাৎই বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলে তার সাথে ফোলা কোষ থেকে পানিও বেরিয়ে পেছন দিকের কোষে চলে যায় এবং ফোলা কোষগুলো চুপসে যায় । আর কোষ চুপসে গেলেই তাদের চাপ কমে গিয়ে পাতার ডাঁটাটি আর সোজা থাকতে না পেরে তখন নুয়ে পড়ে।


‘লজ্জাবতী’ হলো প্রায় ৪শ প্রজাতির গুল্ম ও লতার একটি গণের নাম, এটি লেগিউম জাতীয় ফ্যাবায়েসি পরিবারের Mimosoideae উপ-পরিবারের অন্তর্গত। এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতি হলো Mimosa pudica। এর পাতা ছোঁয়া মাত্র বন্ধ হয়ে যায়। তাপের প্রভাবে, বা সন্ধ্যা বেলাতেও পাতা বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজিতে একে Sensitive Plant, Sleepy Plant, Touch-me-not প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। লজ্জাবতীর আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে, তবে বর্তমানে বিশ্বের সব জায়গায় এটি  ছড়িয়ে পড়েছে।


লজ্জাবতীর কাণ্ড কাঁটাযুক্ত, শক্তও বটে। এর ফুলগুলো বেগুনি ও গোলাপি রংয়ের হয় । এর পাতা অনেকটা তেতুল পাতার মত। এটির জড় মাটির সাথে আকঁড়ে ধরে রাখে। একটি ছোট্ট জায়গায় যদি থাকে, দেখা যায় এর বিস্তার খুবই দ্রততার সঙ্গে বেড়ে থাকে। এর ফলগুলো চ্যাপ্টা, বাঁকা-লম্বাটে। এর পাতা দ্বিপক্ষল, সরু ও লম্বাটে। ৮ থেকে ১২ জোড়া পত্রক থাকে।


লজ্জাবতীর ঔষধি গুণাগুণ বহুলাংশে লক্ষ করা যায়। নানা রোগের চিকিৎসায় হারবাল মেডিসিন তৈরিতে এর ব্যবহার যুগযুগ ধরে চলে আসছে। হাত–পা জ্বালা, অর্শ্ব, রক্তপিত্ত, আমাশয়, দমকা ভেদ, মল কাঠিন্যে, দাঁতের মাড়ি ক্ষতে, বগলে দুর্গন্ধ, কানের পুঁজে, নাড়ি সরে আসায়, ক্ষতে, গ্রন্থিবাত, কুজ্জতাসহ নানা রোগ সারাতে মাইমোসার ঔষধি গুণাগুণ খুব বেশি।লজ্জাবতীর  পাতার শিকড় ও  ব্যবহার বিদেশে বহুল প্রচলিত।


কালের বিবর্তনে লজ্জাবতী প্রায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। একসময় আনাচে কানাচে দেখা যেতো, এখন পাহাড়,জঙ্গল কেটে বানানো হচ্ছে বড় বড় দালান।  ফলে আসতে আসতে বংশ বৃদ্ধি হ্রাস পাচ্ছে।  তবে ভারতের রাজস্থানে বেশ কিছু বাগানে গ্রিন ম্যানুয়ারিং ও কভার ফসল হিসেবে ফসল হিসেবে চাষ প্রচলন আছে।

জাফলং নিউজ/ডেস্ক/শুভ


আরও পড়ুন