গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় ক্যানসার আক্রান্ত ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো। তাঁর মৃত্যুতে ফুটবল দুনিয়া শোকে মুহ্যমান। এবার শেষশ্রদ্ধায় তাঁকে অন্তিমযাত্রায় শায়িত করার পালা। পেলে সমাহিত হবেন তাঁর জন্মস্থান সাও পাওলোয়।
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পেলে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে থাকতেই নিজের ‘শেষযাত্রা’ বিষয়ে বলে গেছেন, যেতে চেয়েছেন যেখান থেকে তাঁর ফুটবল রাজা হয়ে ওঠা, সেই সান্তোস ক্লাব নিজস্ব আঙিনা ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে।
পেলের ইচ্ছানুযায়ী, সোমবার সকালে পেলের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় সেই সান্তোস ক্লাব প্রাঙ্গণে। এর আগে রীতি অনুযায়ী, সমাহিতের জন্য মরদেহ প্রস্তুত করা হবে আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে। জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্টেডিয়ামের মাঝমাঠে ২৪ ঘণ্টা রাখা হবে পেলের কফিন।
এরপর মঙ্গলবার সকালে পেলের মরদেহ নিয়ে ‘শেষযাত্রা’ হবে সান্তোসের রাস্তায়। কফিন নিয়ে যাওয়া হবে ক্যানাল ৬ সড়ক দিয়ে, যেখানে পেলের মা থাকেন। ১০০ বছর বয়সী পেলের মা শয্যাশায়ী।
অন্তিমযাত্রা শেষে মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকা নামের সমাধিস্থলে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে পেলেকে সমাহিত করা হবে। সমাধিস্থলটি মূলত ১৪ তলা ভবন। সেখানে আছে ১৪ হাজার ভল্ট, একটি কৃত্রিম জলপ্রপাত ও একটি কার জাদুঘর। সমাহিত করার অনুষ্ঠানে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
১৯৮৩ সালে এই সমাধিস্থল নির্মাণ করা হয়। এর স্থপতি পেপে আলস্টাট। তবে নির্মিত হওয়ার পর এটির পরিসর আরও বেড়েছে। এখানেই থেমে নেই, এখন সমাধিস্থলটি একটি পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রতীর ও পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় অনেক পর্যটকই দৃষ্টিনন্দন এই সমাধিস্থল দেখতে যান। সমাধিস্থলটির ওপর তলা থেকে ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামও দেখা যায়। এখানেই ক্যারিয়ার শুরু করা পেলে যে পরে ‘ফুটবল রাজা’ হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী, মেমোরিয়াল নেকরোপোল একিউমেনিকা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু উল্লম্ব সমাধিস্থল। সেখানে ১৪ হাজার ভল্ট ছাড়া ভবনের নিচতলার নিচে আরও আছে পাথরের তৈরি ভল্টের মতো একাধিক স্থান, রয়েছে শেষকৃত্যানুষ্ঠান করার কক্ষ, একটি শবদাহের স্থান ও একটি সমাধিস্তম্ভ। মূলত যেসব ব্যক্তির পরিবার তাঁদের স্বজনের মৃতদেহ আরও ব্যক্তিগত ও বিশেষভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে চান, তাঁদের জন্যই এই সমাধিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে।
বিশাল এলাকা নিয়ে তৈরি ১৪ তলা ভবনের এই সমাধিস্থলে একটি বাগানও আছে। এ ছাড়া ভবনের ছাদে আছে একটি ক্যাফে ও একটি কৃত্রিম জলপ্রপাত। তবে জানলে হয়তো সবচেয়ে বেশি অবাক হবেন যে এই সমাধিস্থলে বিভিন্ন সময়ে অনেক মানুষের ব্যক্তিগত ব্যবহার করা গাড়ি নিয়ে একটি জাদুঘর আছে সেখানে।