টাইগারদের জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৫ রান। বোলিংয়ে আইরিশ পেসার মার্ক এডেয়ারের প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় বল সজোরে মেরে সীমানার কাছাকাছি ক্যাচ দিয়ে বসেছিলেন তিনি। তবে বল কোমরের ওপরে উঠে যাওয়ায় আম্পায়ার নো বলের সংকেত দেন। এরপর ফ্রি হিটের বলে সুইপে উইকেটের পিছন দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
গতকাল শুক্রবার ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে তিন ম্যাচ সিরিজের বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে আইরিশদের ৩২০ রানের পাহাড়সম টার্গেট ৩ উইকেট হাতে রেখেই জিতে নিয়েছে টাইগাররা। এই জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল।
এদিন আয়ারল্যান্ডের রান তাড়ায় দ্রুতই আউট হয়ে ফিরেছেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। চতুর্থ ওভারে মার্ক এডেয়ারের বলে লেগ স্কয়ারে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্টে থাকা ফিল্ডার ডকরেলের হাতে তালুবন্দী হয়েছেন তিনি। আউট হওয়ার আগে টাইগার অধিনায়ক করেছেন ১৩ বলে ৭ রান। তামিমের আউটের পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি লিটন দাসও।
দশম ওভারে দলীয় ৪০ রানের মাথায় মনোযোগ সরিয়ে খেসারত দিতে হয় লিটনকে। গ্রাহাম হিউমের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অযথাই খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক লোরকান টাকার সেটি তালুবন্দী করতে মোটেও ভুল করেননি। বিদায়ের আগে লিটন ২১ বলে ২১ রান করেন। এরপর ক্রিজে আসেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। নাজমুল শান্তকে নিয়ে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
দুজনে ৪৭ বলে যোগ করেন ৬১ রান। কিন্তু ক্যাম্পারের বলে খেলতে গিয়ে যেন ক্যাচ অনুশীলন করে বসেন সাকিব। ব্যাকফুটে গিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৬ রানের মাথায় ডকরেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশের রানের চাকা থামেনি। হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন। শান্ত ৪৯ বলে তুলে নেন ফিফটি। ফিফটির পর চওড়া হয় তার ব্যাট।
অন্যদিকে হৃদয় সাবলীল ভঙ্গিতে বল-রানের পার্থক্য ধরে রেখে খেলেন। দুজনে ১৩১ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেন। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে ডকরেলকে মিড উইকেটে পুল করে ডাবল নেন শান্ত। যার সুবাদে এক লাফে ৯৯ থেকে চলে যান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। ক্যারিয়ারে প্রথম শতক হাঁকান মাত্র ৮৩ বলে। তবে ওই ওভারেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকানো তাওহিদ হৃদয় ৬৮ রান করে আউট হয়ে যান।
এরপর শান্তও বেশিক্ষণ আর থাকতে পারেননি। দলীয় ২৫৭ রানের মাথায় ক্যাম্পারের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন এই ব্যাটার। বিদায়ের আগে ৯৩ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৭ রান করেন শান্ত। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে আবারও ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল সফরকারীরা। তবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন।
এতে মেহেদি হাসান মিরাজের ১২ বলে ১৯, তাইজুল ইসলাম ৯ ও শরীফুল ইসলামের ৪ রানে ভর করে ৪৯.৩ ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। শেষ পর্যন্ত মুশফিক অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৩৬ রানে।
বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মিডিয়াম পেসার কার্টিশ ক্যাম্ফার ও বাহাতি স্পিনার জর্জ ডকরেল। এছাড়া একটি করে উইকেট পান জশ লিটল, মার্ক এডেয়ার ও গ্রাহাম হিউম।
এর আগে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশি অধিনায়ক তামিম ইকবাল। সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা ইনিংসের শুরুতেই প্রমাণ করেন টাইগার পেসার হাসান মাহমুদ। আইরিশ দুই ওপেনার পল স্টার্লিংকে শূন্য রানে আউট করার পর স্টিফেন ডোহানি ফেরেন ব্যক্তিগত ১২ রানে।
ফলে স্কোরবোর্ডে রান ১৬ হতে না হতেই জোড়া উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে যায়। কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৯৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে টেনে নিয়ে যান অ্যান্ড্রু বালবার্নি ও হ্যারি টেক্টর। তবে ৪২ রানের মাথায় বালবার্নিকে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন শরীফুল ইসলাম।
এরপর লোরকার টাকার ১৬ ও কার্টিশ ক্যাম্ফার ৮ রান করে দ্রুত ফিরে গেলে আবারও কিছুটা আশা জাগায় বাংলাদেশ। তবে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৮ বলে ১১৫ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের আশা ভেঙে চুরমার করে দেন টেক্টর ও ডকরেল। এদিন মাত্র ৯২ বলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন ২৩ বছর বয়সী টেক্টর।
তবে দলীয় ২৮২ রানের মাথায় ক্যারিয়ার সেরা ১৪০ রান করে বিদায় নেন টেক্টর। এরপর বাকি কাজটুকু মার্ক এডেয়ারকে নিয়ে সামলান ডকরেল। এই ব্যাটার ৪৭ বলে ৭৪ রানের ফিষ্ফোরক ইনিংস খেলেন। এডেয়ার করেন ৮ বলে ২০ রান। ফলে ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৯ রান করে আইরিশরা।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ ও শরীফুল ইসলাম। এছাড়া একটি করে উইকেট পান তাইজুল ইসলাম ও এবাদত হোসেন।