রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

২২ লাখ মানুষের জন্য নেই কোনো নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

জাফলং নিউজ ডেস্ক / ১৬২ শেয়ার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ পূর্বাহ্ন

২২ লাখ মানুষের জন্য নেই কোনো নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

মৌলভীবাজার সংবাদ দাতা::

বাইশ লাখ মানুষের জেলা মৌলভীবাজার। কিন্তু জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে নেই নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ। এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার-২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের একটি মাত্র পদ রয়েছে। এ পদে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে কর্মরত আছেন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. এইচ এম এনামুল হক। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় এ বিভাগে এটিই একমাত্র পদ। হঠাৎ করেই পারিবারিক আইনি জটিলতায় এখন তিনি কারাগারে আছেন। ফলে এই পদে জেলার কোনো সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এ অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ রোগীর। বিশেষ করে দুস্থ ও গরীব রোগীরা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন। 

বুধবার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে মৌলভীবাজার-২৫০ শয্যা সদর জেনারেল হাসপাতালে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বেশ কয়েকজন রোগীর সাথে। 

তুহিন আহমেদ নামে এক রোগী বলেন, ‘হাসপাতালে জানলাম নাক-নাক-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। শুনেছি তিনি কারাগারে আছেন। চিকিৎসক না পেয়ে প্রাইভেট চেম্বারে ৭০০ টাকা ভিজিট দিয়ে চিকিৎসক দেখিয়েছি। প্রাইভেট চেম্বারে অযথা ভোগান্তি হয়। টাকাও বেশি খরচ হয়। আমার বড় কোন সমস্যা নেই। তারপরও প্রাইভেট চেম্বারের চিকিৎসক এক হাজার টাকার টেস্ট দিলেন।’

লতিফুর রহমান নামে এক রোগী বলেন, আমাদের মতো গরীব রোগীর জন্য সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকই একমাত্র ভরসা। নাক-নাক-গলা বিশেষজ্ঞ কারাগারে থাকায় বিকল্প কোনো চিকিৎসক নেই। ৫০০-৭০০ টাকা দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তার দেখানো সম্ভব নয়।

আম্বিয়া বেগম নামে এক রোগী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম এনামুল হক ঘনঘন ছুটিতে ছিলেন, এখন কারাগারে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে গিয়েও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাননি।  যে কারণে তিনি বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন।  

আলাপকালে পিয়ারা বেগম নামে এক রোগী বলেন, ‘নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম এনামুল হকের হাতে বেশ যশ রয়েছে। তাছাড়া রোগীদের প্রতি তাঁর ব্যবহারও ভালো। এখন তিনি কারাগারে আছেন, কতদিন থাকবেন কে জানে। তিনি যতদিন কারাগারে আছেন, ততদিন নাক-কান-গলা সমস্যায় রোগী দেখার জন্য বিকল্প ডাক্তার নেই। এটা আমাদের মতো সাধারণ রোগীদের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই না। 

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোরর্শেদ বলেন, পারিবারিক সমস্যায় পড়ে ডা. এইচ এম এনামুল হক আইনি জটিলতায় আছেন। 

২২ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এখন কি হবে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন- চিকিৎসক আছেন, কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে কারাগারে অন্তরীণ। অবশ্যই রোগীদের অসুবিধা হবে। এখন আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়টি আদালতের নির্দেশনা ছাড়া কিছু বলা যাবে না। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার-২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, পারিবারিক কারণে আইনি জটিলতায় ডা. এনামুল হক গ্রেফতার হয়েছেন। আপাতত নাক-কান-গলা বিভাগে বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসক নেই। যে কারণে চিকিৎসা ব্যাহত হওয়া স্বাভাবিক। 

এই পদে অন্য কোন চিকিৎসক আসবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘উনার চাকরি যায়নি বা চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়নি, এই পদে তিনি বহাল আছেন। উনার যে প্রাপ্য বেতন ও সুবিধা সেটা পাচ্ছেন। এখন অন্য কোন ডাক্তার আনার সুযোগ নেই। নাক-কান-গলা বিভাগের রোগীদের অসুবিধা হবে, আর কিছু করার নেই।

এদিকে মৌলভীবাজার মডেল থানার সূত্র জানায়, ডা. এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী ইমানা ইসমাত যৌতুকের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। রোববার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৯ । আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।


আরও পড়ুন